ময়মনসিংহ কিসের জন্য বিখ্যাত | ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান সমূহ

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীনতম একটি জেলা হল ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহ জেলায় অনেক প্রাচীন স্থাপনা ও পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। ময়মনসিংহে যে সকল বিখ্যাত স্থান ও খাবার রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।

উপস্থাপনা

১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন ময়মনসিংহ জেলা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বৃহত্তম এই জেলাটি বিভিন্ন অঞ্চল এবং জেলায় বিভক্ত হয়ে যায়।বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম লীলাভূমি হল ময়মনসিংহ। 

আপনি যদি ময়মনসিংহ ভ্রমণ করতে আসেন, তাহলে ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয়ের সম্পর্কে জানতে পারবেন। যাই হোক আপনি যদি ময়মনসিংহ ভ্রমণ করার ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। 

ময়মনসিংহ কিসের জন্য বিখ্যাত

ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্য থেকে সর্বাধিক পরিচিত এবং জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো। আশা করি নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে আপনার অনেক উপকারে আসবে। আসুন দেখে নেয়া যাক, ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম।

  • আলেকজান্ডার ক্যাসেল।
  • শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক।
  • মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট।
  • বিপিন পার্ক।
  • বোটানিক্যাল গার্ডেন, ময়মনসিংহ।

আলেকজান্ডার ক্যাসেল

দেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন স্থাপনা হল আলেকজান্ডার ক্যাসেল। ১৮৭৯ সালে ময়মনসিংহে এই ক্যাসেলটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য। তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। 

গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি নির্মাণ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে লোহার রড ব্যবহার করা হয়। আর এর ফলে স্থানীয়দের কাছে এই দুর্গটি "লোহার কুঠি" নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। যদিও এই স্থাপনাটি লোহার দারা নির্মাণ করা হয়েছে তবে এই প্রশান্তির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য সুদূর চীন থেকে কালি করে নিয়ে আসা হয় এবং তারা বিভিন্ন ধরনের মার্বেল পাথরে নকশা খচিত করে প্রাসাদের সামনের অংশটি দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। 

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক

বাংলাদেশের যে কয়েকজন চিত্রশিল্পী বিশ্বাঙ্গনে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন তাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন হলেন কালজয়ী চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। প্রখ্যাত এই চিত্রশিল্পী তৎকালীন বৃহত্তম ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। যদিও বর্তমানে তার জন্মস্থান নেত্রকোনা জেলার অন্তর্ভুক্ত, তবে তার স্মৃতি যাদুঘর এবং তার নামে পার্ক ময়মনসিংহ জেলাতেই অবস্থিত। 

জয়নুল আবেদীন পার্ক ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত। সেটি বর্তমানে একটি ভ্রমণ স্পটে পরিণত হয়েছে। মিনি চিড়িয়াখানা ঘোড়ার গাড়ি চরকে ঐতিহ্যবাহী খাবার ম্যাজিক নৌকা ট্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড সেখানে আছে। প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী তার ভ্রমণ করতে যায়। সেখানে ভ্রমন করলে আপনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের শিল্পকর্ম দেখার পাশাপাশি আনন্দ ভ্রমণ করতে পারবেন। 

মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট

আপনি যদি প্রকৃতির সাথে মিশে গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার জন্য মেঘমাদি ভিলেজ রিসোর্ট আদর্শ একটি ভ্রমণ স্পট হতে পারে। মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট এ নান্দনিক কটেজ রয়েছে। এবং দ্বিতল ভবন গুলোর সাথে চমৎকার সুইমিং পুল এটাস্ট করা রয়েছে। এছাড়া সেখানে রয়েছে গাছে ঝুলানো বিভিন্ন ধরনের দোলনা। মেঘমাদি ভিলেজ রিসোর্টরের রয়েছে বিস্তৃত সবুজ অঞ্চল সেখানে আপনি আপনার ইচ্ছামত করে সময় ব্যয় করতে পারবেন।

ঢাকা থেকে মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্টে যেতে সময় লাগে মাত্র আড়াই ঘন্টা। এছাড়া যে কোনো পরিবহনের বাসে আপনি সেখানে যেতে পারবেন। তাই চাইলে আপনি ঢাকা থেকে যেকোনো সময় মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট ভ্রমণ করতে পারবেন। 

বিপিন পার্ক

প্রায় ২০০ বছর আগের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বিনোদন কেন্দ্র হলো বিপিন পার্ক। এই পার্কটি ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাচীন বিপিন পার্কের অল্প কিছু অংশই অবশিষ্ট রয়েছে এখন। তবে সেই অংশগুলো অক্ষত রেখে নতুন করে সংস্কার করে সেখানে একটি থিম পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন করে সেখানে ঝরনা ফুলের বাগান সীমানা প্রাচীর বসার স্থান বিভিন্ন স্থাপনা এবং বেদি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে আরো বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে তাই চাইলে আপনি প্রাচীন এই ভ্রমণ স্পটটি ভ্রমণ করে আসতে পারেন।

বোটানিক্যাল গার্ডেন, ময়মনসিংহ

শুধু ময়মনসিংহের নয় বরং সারা বাংলাদেশের গর্ব হল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। মনোরম পরিবেশ প্রাকৃতিক আবহাওয়া ও শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ময়মনসিংহের সুনাম রয়েছে। তাই যদি চান তাহলে আপনি ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমণে যেতে পারেন। 

এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ২৫১ জায়গা জুড়ে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। সেখানে ভ্রমণে গেলে আপনি এ সকল উদ্ভিদ দেখতে পাবেন এবং সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। ১৯৬৩ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

এই বোটানিক্যাল গার্ডেন টি বোটানিক গার্ডেন্স কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল সংস্থাটি কর্তৃক স্বীকৃত এবং এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে এক হাজারের অধিক প্রায় ১৫শ এর মত মাঝারি এবং সাড়ে চার হাজারের মতো ছোট বৃক্ষ রয়েছে এছাড়াও এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে আছে ৬০০ প্রজাতির বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ।

ময়মনসিংহ বিখ্যাত স্থান | ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান সমূহ

ইতোমধ্যেই উপরে ময়মনসিংহ জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। নিচে ময়মনসিংহের আরো বেশ কিছু বিখ্যাত স্থানের নাম তুলে ধরা হবে চাইলে আপনি নিম্ন বর্ণিত ভ্রমণ স্পটগুলোতেও ভ্রমণ করতে পারেন। চলুন দেখে নেয়া যাক ময়মনসিংহের বিখ্যাত স্থানসমূহের নাম।

  • রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি।
  • আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ী।
  • সন্তোষপুর রাবার বাগান।
  • শশী লজ।
  • মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি।

উপসংহার

আপনি যদি ময়মনসিংহ ভ্রমণ করেন তাহলে উপরে উল্লেখিত ভ্রমণ স্পটগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া ময়মনসিংহ শহর অনেক পরিপাটি ও সুন্দর। ভালো মনের কিছু আবাসিক হোটেল ও রয়েছে শহরে তাই ভ্রমণ করতে গেলে কোন ধরনের বিলম্ব না পড়ার সম্ভাবনা নেই। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আরো পড়ুন